রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক কী সত্যিই উদ্বেগের নাকি অহেতুক?, রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক গুজব ও বাস্তবতা, রাসেল ভাইপার নিয়ে গুজব আর ভুল ধারণা আতঙ্ক নয় জেনে রাখুন

রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক কী সত্যিই উদ্বেগের নাকি অহেতুক

স্বাস্থ্য ঔষধি উদ্ভিদ ও প্রাণী

Google Adsense Ads

ছাগলকাণ্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাসেলস ভাইপার তার অবস্থান শক্ত করে ধরে রেখেছে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোয় রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে।

রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক কী সত্যিই উদ্বেগের নাকি অহেতুক?

ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে অনেকে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করছেন যে সাপটি কামড় দিলে অতিদ্রুত মানুষের মৃত্যু হয়।

ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলাম পদ্মা তীরবর্তী অঞ্চল দোহারে। পদ্মা অববাহিকার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও এলাকা জুড়ে রাসেলস ভাইপারের চরম আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। সবার মুখে মুখে একই আলোচনা রাসেলস ভাইপার। প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হওয়ার কারণে অনেকেই আমার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। সবাইকে আমি জিজ্ঞেস করেছি আপনারা সাপটিকে স্বচক্ষে দেখেছেন কি না। সকলেরই উত্তর তারা নিজে এর আক্রমণের শিকার হননি, তবে অনেকেই হয়েছে বা সাপটি দেখেছেন বলে তারা শুনেছেন।

রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক কী সত্যিই উদ্বেগের নাকি অহেতুক বিভিন্ন এলাকায় লোকজন যেকোনো সাপ মেরে রাসেলস ভাইপার বলে বাহাবা কুড়ানোর জন্য পোস্ট করছেন ফেসবুকে। এরই মধ্যে ফরিদপুরের একজন রাজনীতিবিদ প্রতিটি রাসেলস ভাইপার সাপ মারার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। এই সাপটি নিয়ে যে যেভাবে পারছেন তথ্য এবং গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছেন। সাপ নিয়ে যারা গবেষণা করেন এমন ব্যক্তি ও সংগঠন ইতিমধ্যে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন কিন্তু সেই পোস্টগুলো খুব বেশি শেয়ার বা ভাইরাল হচ্ছে না।

ফেসবুকে প্রচার করা বেশিরভাগ পোস্টে দেখা যায়, সাপের প্রায় একই ছবি বা ভিডিও। ২১ জুন সকাল থেকে কয়েকটি ফেসবুক আইডি ও পেজে প্রচারিত হয় যে, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে রাসেল ভাইপারের আগমন ঘটেছে। এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

খবর নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবের একটি ভিডিও সোনাপুরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সোনাপুর গ্রামে রাসেলস ভাইপার সাপ দেখা যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন বুঝে বা না বুঝে কিছু ব্যক্তি অন্য জায়গার ঘটনা ফেনীর বলে চালিয়ে দিয়েছেন।

রাসেলস ভাইপার আতঙ্কের কারণে বিভিন্ন জায়গায় অনেকেই অন্যান্য বিষধর কিংবা নির্বিষ সাপের সাথে রাসেলস ভাইপারকে মিলিয়ে ফেলছেন। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে যেকোনো সাপ মেরে তার ছবি তুলে বা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন। সাপ খাদ্যশৃংখলের অন্যতম একটি প্রাণী এভাবে সাপের পরিচয় না জেনে নির্বিচারে নির্বিষ এবং বিষধর সাপ মারার ফলে তা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

নির্বিষ সাপকে বিষধর সাপের সাথে মিলিয়ে ফেললে বা বিষধর সাপকে নির্বিষ সাপ ভেবে ভুল করলে মানুষ এবং সাপ, সকলেরই জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বাংলাদেশে বর্ষাকালে প্রায় প্রতি বছরই সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। ভাটি অঞ্চলের নিচু দেশ হওয়ার কারণে বর্ষায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয় এবং সাপের আবাসভূমিতে পানি ঢুকে যায়। সব ধরনের সাপই বর্ষাকালে বিভিন্ন উঁচু এলাকা এবং ঘরবাড়ির কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। আর এই সময়ে লোকজন না দেখে, না বুঝে সাপের সংস্পর্শে আসে আর তখনই মানুষ আক্রান্ত হয়।

শুধুমাত্র রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া নয়, বাংলাদেশে প্রায় ৯৪ প্রজাতির সাপ আছে এবং এই সাপের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সাপ নির্বিষ। বাংলাদেশের প্রাপ্ত বিষধর সাপসমূহ মূলত এলাপিডি (Elapidae) পরিবারভুক্ত। এছাড়া কিছু ভাইপারিডি (Viperidae) এবং সামুদ্রিক হাইড্রোফিডি পরিবারভুক্ত সাপও দেখা যায়।

Russell’s Viper : রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Daboia russelii) ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ এবং উপমহাদেশের প্রধান চারটি বিষধর সাপের একটি। প্যাট্রিক রাসেল ১৭৯৬ সালে তার ‘অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়ান সারপেন্টস, কালেক্টেড অন দ্য কোস্ট অফ করোমান্ডেল’ বইয়ে চন্দ্রবোড়া সম্পর্কে লিখেছিলেন ও তার নাম অনুসারে এটি রাসেল ভাইপার নামে পরিচিত হয়।

রাসেলস ভাইপার কামড়ালে করতে হবে ৬ কাজ

দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে সাপে কামড়ালে কয়েকটি কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম কাছের সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায় জানিয়ে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে রাসেলস ভাইপার কামড়ালে যেসব কাজ করতে বলা হয়েছে, সেগুলো হলো-

Google Adsense Ads

১. দংশিত অঙ্গ নাড়াচাড়া করা যাবে না। পায়ে দংশনে বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনে হাত নাড়াচাড়া করা যাবে না। কারণ হাত-পায়ের নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে।
২. আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
৩. ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন।
৪. দংশিত স্থানে কাঁটবেন না, সুই ফোটাবেন না, কিংবা কোনো রকম প্রলেপ লাগাবেন না বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।
৫. সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
৬. যত দ্রুত সম্ভব কাছের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান।

উল্লেখ্য, এক সময়ের বিলুপ্তপ্রায় রাসেলস ভাইপার সাপ ক্রমেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বরেন্দ্র এলাকা ছেড়ে সাপটির দেখা মিলছে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর এমনকি ঢাকার আশপাশেও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হওয়ায় বেড়েছে এ সাপের প্রাদুর্ভাব। রাসেলস ভাইপারের বিষ হেমাটোটক্সিক। যার কারণে ছোবল দিলে আক্রান্ত স্থানে পচন ধরে। ছোবলের পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফুলে যায় ক্ষতস্থান। এর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়লেও রাসেলস ভাইপার বাচ্চা দেয়। গর্ভধারণ শেষে স্ত্রী রাসেলস ভাইপার সাধারণত ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ডও আছে। একদিকে উচ্চ প্রজনন ক্ষমতা; অন্যদিকে বেজি, গুইসাপসহ প্রকৃতি থেকে সাপের শত্রু বিলীন হয়ে যাওয়া। অন্যদিকে ইঁদুর, ব্যাঙ রাসেলস ভাইপারের প্রিয় খাবার, যা ফসলের ক্ষেতে থাকে। ফলে ওইসব জায়গায় সাপের পর্যাপ্ত খাবারের উপস্থিতি থাকায় বাড়ছে রাসেলস ভাইপার। রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক কী সত্যিই উদ্বেগের নাকি অহেতুক

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া মাঠে কাজ করার কারণে এবং সাপে কাটার পর গ্রামে এখনও ঝাড়ফুঁকের মতো কুসংস্কার থাকায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। 

পরিশেষে : রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক কী সত্যিই উদ্বেগের নাকি অহেতুক?, রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক গুজব ও বাস্তবতা, রাসেল ভাইপার নিয়ে গুজব আর ভুল ধারণা আতঙ্ক নয় জেনে রাখুন

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Google Adsense Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *