অপ্রিয় আমি লেখিকা: সাদিয়া আফরিন
আমি পার্কের মধ্যে হাঁটছিলাম হঠাৎ একটা ছেলে এসে আমাকে খুব জোরে ধাক্কা মেরে চলে যাচ্ছিল।এই আপনি কি চোখে দেখেন না আমাকে ধাক্কা মারলেন কেন।
লোকটি বলল সরি আপু আমি ইচ্ছে করে দেই নি মাফ করে দিয়েন।
ছেলেটার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছিল সে একটা বাজে চরিত্রের ছেলে আশেপাশে লোকজন ছিল তাই হয়ত মাফ চেয়েছে কিন্তু ওর মুখের শয়তানি হাসি টা আমার চোখ এড়ায়নি।
যাইহোক আমি আর কিছু বললাম না নিজের মতো সামনে এগিয়ে যেতে লাগলাম একটু সামনে গিয়ে দেখি ঐ ছেলেটা একটা মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছিল। আমি ওখানে গিয়ে ছেলেটার গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিই।ছেলেটা আমার উপর ভীষণ রেগে গিয়ে তকে আমি দেখে নিব বলে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।বিকালে আমি বাড়িতে আসলাম। ছেলেটার কথা কিছু তেই মাথা থেকে যাচ্ছে না।
এখন যদি ছেলে টা আমার কিছু করে ফেলে। বাড়িতে আমার বিয়ের জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে এখন একটা ভালো ছেলে পেলেই আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।বাবা রাতে এসে বললেন আমার জন্য নাকি খুব ভালো একটা ছেলে পাওয়া গেছে। কালকে আমাকে ছেলের বাড়ির লোকজন দেখতে আসবে। আমি বাড়িতে কাউকেই পার্কের কথাটা বলি নি। সারারাত আমি ঘুমাতে পারি নি অনেক টেনশন কাজ করছিলো মনে। পরেরদিন আমাকে সাজিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যায়।পাত্রকে দেখে আমি তো অবাক হয়ে যায় আরে এতো কালকের ঐ বখাটে ছেলে টা।
ছেলে টা আমার মুখটা দেখতে পায় নি সেদিন কারণ আমি বোরখা পড়ে ছিলাম।এই ছেলে আমাদের বাড়িতে কি করছে আর আমাকেই বা কেন দেখতে এসেছে কিছুই বুঝতে পারছি না। ওদের বাড়ির সবার আমাকে খুব ভালো লেগেছে পাড়লে এখনি বিয়ে করিয়ে নিয়ে যাবে।
কিন্তু আমি তো এই ছেলে কে বিয়ে করতে চাই না। ওনারা চলে যাওয়ার পর আমি বললাম আমি এই বিয়ে করতে পারবো না আমাকে তুমরা জোর করবা না। আমি এই কথাটা বলতে না বলতেই আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার মা বাবা বলে উঠল ছিঃ তর অন্য কাউকে পছন্দ সেটা আগে বললেই পারতি এখন উনারা আমাদের ব্যাপারে কি ভাববেন আমার তো উনাদের সামনে মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না কারণ আমি তাদের কথা দিয়েছি তর সাথেই শুভ্রর বিয়ে হবে। এখন যদি তুই এই বিয়ে না করিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখতে হবে এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি তুই।
আমার আর কিছু বলার নেই কারণ আজ পর্যন্ত কেউই আমাকে বুঝতে পারল না যেখানে আমার মা বাবাই আমাকে বুঝতে পারল না সেখানে অন্য কেউ তো আরো বুঝতে পারবে না। আমার সবটা কথা তো একবার শুনতে পারত। যাইহোক আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না এই ছেলে কেই বিয়ে করব তারপর যদি আমি মারা যায় তাহলে যেন আমার মরা মুখ দেখে আমার মা বাবার মুখে হাসি ফোটে। আমার মা বাবার জন্য আমি সব করতে পারি কিন্তু আমার দুঃখ একটাই যে আমাকে আমার মা বাবা বুঝতে পারে না।
আমি তো জানতাম মা বাবার চেয়ে সন্তান কে কেউ বেশি চিনতে পারে না তাহলে আমার মা বাবা কেন আমাকে বুঝতে পারল না আমার কোন কথা তারা কেন শুনতে চান না। আমি তো তাদের একমাত্র সন্তান তারপরও কেন আমি এত অসহায় আমার মনের কথা গুলো কেন তাদের কে বলতে পারি না মা বাবার চেয়ে আপন তো পৃথিবীতে কেউ হয় না।
যাইহোক আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি দেখেই উনারা খুশি কিন্তু আমার মনের কথা টা বুঝতে পারল না আমার মনে হচ্ছে এই ছেলে কে বিয়ে করার চেয়ে আমার মরে যাওয়া অনেক ভালো কিন্তু আমি তো মরতেও পারব না কারণ আত্মহত্যা মহাপাপ। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সামনের শনিবার দিন।
আমার কিছু ভালো লাগছে না কাউকে কিছু বুজাতেও পারছি না।তাই ভাবলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। আমি একটা রেস্টুরেন্টে এ গেলাম কফি খাওয়ার জন্য। গিয়ে দেখি শুভ্র ঐ মেয়েটার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না এই মেয়েটা ওর সাথে কথা বলছে কেন কিছু দিন আগেই তো শুভ্র ওর সাথে নোংরামি করার চেষ্টা করছিল কিন্তু এই মেয়েটা এরপরও কীভাবে।
আমার মাথায় কিছু ডুকছে না আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি সেখান থেকে বাড়িতে চলে এলাম কিন্তু আমার মাথা কাজ করছে না।কে এই মেয়েটা আর ওর সাথে শুভ্রর কিসের সম্পর্ক আমাকে সবকিছু জানাতে হবে।
আমি বিয়ে করে নতুন বাসায় আসলাম। বাসর ঘরে এসেই শুয়ে পড়লাম কিন্তু শুভ্র আমার সাথে শুয় নি সে নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়েছে।
আমি ও আমার মতো ঘুমিয়ে পড়লাম সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম।শুভ্র অচেতন ভাবে ঘুমিয়ে আছে আচ্ছা এই ছেলে টা তো কালকে আমার সাথে একটা কথাও বলল না। কিন্তু নিজের বউয়ের সাথে ঘুমালো না কেন। কেন সে নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়েছে সে যদি কথা না বলে তাহলে আমি কেন কথা বলতে যাব এমনিতেও আমার মাথাটা কাজ করছে না কি করব আমি এই রহস্যের সমাধান কীভাবে করব। শুভ্রর মাথার কাছে ওর ফোন টা রাখা ছিল ।
আমি ফোন টা হাতে নিলাম যদি এখান থেকে কিছু জানতে পারি আমার কপাল কিছু টা হলেও ভালো ছিল যে ফোনে কোন লক দেওয়া ছিল না তাই আমি ওর ফোন ঘাটতে লাগলাম দেখলাম ঐ মেয়েটার অনেক গুলো ছবি শুভ্রর ফোনে কিন্তু এই মেয়েটা কে আর ওর ছবি শুভ্রর ফোনে কীভাবে আসল।
আমি ছবি দেখতে দেখতে একটা ছবিতে আমার চোখ আটকে গেল ঐ মেয়েটার সাথে শুভ্রর বিয়ের ছবি আমি কিছু বুঝতে পারতেছি না ঐ মেয়েটি তাহলে শুভ্রর বউ তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছে সে।শুভ্র ঘুম থেকে উঠতেই ওর একটা ফোন আসে আর সে তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়
শুভ্র চলে যাওয়ার পর সেদিনের পার্কের বিষয় টা নিয়ে ভাবছিলাম। শুভ্রর হাতে সেদিন একটা গিফট বক্স ছিল ঐ মেয়েটা যে শুভ্রর বউ তার কাছে যাওয়ার জন্যেই তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিল আর আমার সাথে ধাক্কা খায়।
আর নিজের বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করতে চাইছিল হয়তো আমি শুধু শুধু ভুল বুঝে ওকে চড় মারলাম এই বিষয় টা তো আমার কাছে ক্লিয়ার কিন্তু শুভ্র আমাকে কেন বিয়ে করেছে এটা তো মাথায় আসছে না।
যাইহোক আমি তো এখন ওর বিবাহিত স্ত্রী তাই আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি প্রতিদিন ওর জন্য খাবার রান্না করে বসে থাকতাম ওর জন্য অনেক রাত অবধি জেগে থাকতাম ।
সে অনেক রাতে বাড়িতে ফিরেছে। আমি বললাম আসুন খেয়ে নিন। শুভ্র বলল আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি এখন খাব না। প্রত্যেকদিন সে বাইরে থেকে খেয়ে আসত আর আমি ওর অপেক্ষা না খেয়ে বসে থাকতাম।
শুভ্র:এই তুমাকে কতদিন বলছি আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকবা না আমি খাব না তোমাকে আমার একদম সহ্য হয় না।
অনেকে গল্প পড়েন কিন্তু লাইক কমেন্ট করেন না। করা লাগবে না আপনারা লাইক কমেন্ট।
যারা কষ্ট করে গল্প পড়ে লাইক কমেন্ট করে অনুপ্রেরণা দেন তাদের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে দোয়া ও ভালোবাসা রইলো
আশাকরি সবাই কমেন্ট করে জানাবেন সম্পুর্ণ গল্প টা কেমন হয়েছে তাহলে খুব শীগ্রই নতুন গল্প শুরু করবো। ততক্ষণ নিজের যত্ন নিন,,সুস্থ থাকুন।
গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত
আমার চোখে পানি ছলছল করছে কিন্তু কিছু বললাম না সে নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়েছে আজ পর্যন্ত নিজে থেকে একটা কথা ও বলে নি আমার সাথে।
ইশিতা: আমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হয়ে গেল তুমি এখনো তুমার মা বাবার সাথে দেখা করতে নিয়ে যাচ্ছ না কেন?
শুভ্র: রাগ করো না সোনা বউ আমার তুমি তো জানো আমার মা বাবা যদি জানতে পারে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছি তাহলে আমাকে তাজ্য পুত্র করে দিবে তখন আমার কি হবে বল তো আগে সম্পত্তি টা নিজের নামে করে নেই তারপর তোমাকে নিয়ে যাব।
আর আমি তো তোমার সাথে থাকি অল টাইম বাড়িতে তো শুধু রাত টা কাটাই আর সবসময় তো তোমার সাথেই থাকি।
ইশিতার বান্ধবী ইশিতাকে বলছে শুভ্র কে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না আমাদের ওর ব্যাপারে খুঁজ খবর নিতে হবে।
পরেরদিন ইশিতা ওর বান্ধবীকে নিয়ে বাড়িতে আসে শুভ্র তখন অফিসে ছিল।আর আমার শশুর শাশুড়ি একটু বাহিরে গিয়েছিলেন।
কলিং বেল বাজতেই আমি দরজা খুলে দেই
ইশিতা তে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।আরে এটাই তো শুভ্রর বউ।
ইশিতা: আমার নাম ইশিতা আমি আর শুভ্র একই অফিসে কাজ করি কই শুভ্র তো কোনদিন বলে নি ওর বাড়িতে কোন বোন আছে।
আমি:আরে না আমি তো এই বাড়িতে কাজ করি
আমি প্রতিদিন ১২টার সময় এসে বাড়ির কাজ করি।ভাইয়া তো সবসময় বাড়ির বাইরে থাকেন তাই হয়তো জানেন না আমার কথা।
ইশিতা:ওহ আচ্ছা তুই তাহলে এই বাড়ির কাজের লোক তাহলে তকে বলতে আর লজ্জা কিসের আমি হলাম শুভ্রর বউ।ওর কিছু প্রবলেম এর জন্য আমাকে এই বাড়িতে আনতে পারতেছে না
কিছু দিন পরেই আমি শুভ্রর হাত ধরে এই বাড়িতে আসব।
ইশিতা চলে যাওয়ার পর একা একা অনেকক্ষণ কান্না করলাম কিন্তু আমার তো কান্না করার কথা না তাহলে কি আমি শুভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছি।
না এটা হতে পারে না। আমি ঠিক করলাম আমি আর শুভ্রর জীবনে থাকব না ।
শুভ্র বাড়িতে আসলে দেখলাম ওর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। যাইহোক আমি কোন কথা বললাম না। শুভ্র কয়েকদিন ধরে ইশিতার পরিবর্তন লক্ষ্য করছে । শুভ্র ইশিতাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমাকে বিয়ে করেছে ওর মা বাবার মন রক্ষার জন্য যেদিন সম্পত্তি নিজের নামে হয়ে যাবে সেদিন তো আমাকে ছেড়ে দিবে আর ইশিতাকে এই বাড়িতে এনে তুলবে।
শুভ্র অনেক কস্ট করে ইশিতার ঠিকানা জোগাড় করে সেখানে চলে যায় তখন একজন ভদ্রলোক শুভ্রকে জিগ্গেস করে কে আপনি এখানে কি চান
আমি এখানে ইশিতাকে খুঁজতে এসেছি।
উনি বললেন ইশিতা তো এখন একটু ব্যাস্ত আছে
কি বলবেন আমাকে বলেন আমি ওর হ্যাসবেন্ড।এই কথা শুনার পর শুভ্রর পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গিয়েছে সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারতেছে না। শুভ্র কান্না করতে করতে বাড়ির দিকে আসছিল। আমি এমন একটা মেয়েকে ভালবাসি যে আমাকে নয় আমার টাকাকে ভালোবেসেছিল। এখন আমার থেকে বড়লোক ছেলে পেয়ে ওকে বিয়ে করে নিয়েছে।আর আমার বউ টা দিনের পর দিন আমার জন্য না খেয়ে থেকেছে আমার জন্য কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও পরী আমি আসছি তোমার কাছে।শুভ্র বাড়িতে এসেই আমাকে ডাকতে লাগল পরী এই পরী কোথায় তুমি এখানে আসো। কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে আমার রুমে গেল সেখানে একটা চিঠি রাখা ছিল
শুভ্র চিটিটা পড়তে লাগলো আমি আজ পর্যন্ত কারো মনে জায়গা করতে পারলাম এই আমি টা সবার বড্ড অপ্রিয়।এই অপ্রিয় আমি টা আর আপনার জীবনে থাকবো না আপনি ইশিতা কে নিয়ে শান্তিতে থাকবেন আজকের দিনটার আপনার কাছে হয়তো কোন দাম নেই কিন্তু আমার কাছে আজকের দিনটা অনেক স্পেসাল কারণ আজকে আমাদের ফাস্ট এনিভারসিরি।তাই আপনাকে স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেলাম।
শুভ্র তখনই তখনি আমাকে খুঁজতে বাইরে বেরিয়ে পড়ল কিন্তু আমি যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন একটা ট্রাক আমার উপর দিয়ে চলে যায়।শুভ্র দেখল রাস্তায় অনেক মানুষের ভিড় তাই সে সেখানে গেল গিয়ে দেখল অপ্রিয় আমি টা আর নেই ওর জীবনে শুভ্র অনেক কান্না করছিল আমার জন্য পরী প্লীজ ফিরে আসো আমার জীবনে কে বলেছে তুমি অপ্রিয় তুমি তো আমার সবচেয়ে প্রিয় কিন্তু এই কথাটা আমার কানে পৌঁছায় নি কারণ আমি এখন আর নেই । সবাইকে মুক্তি দিয়ে চলে গেলাম না ফেরার দেশে।
সমাপ্ত