স্তন ক্যানসার সচেতনতার বিভিন্ন দিক

অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনলাইনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ কিছুটা বেশি। সবার সচেতনতায় ভিন্নভাবে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা, পরিবারিক ইতিহাস, এবং নারীর নিজের সম্পর্কে সচেতনতা বিষয়ে এ লেখা।

অনেকে মনে করেন, স্তন ক্যানসার শুধু মায়ের দিকের আত্মীয় থেকে পারিবারিকভাবে পেতে পারেন। বাবার দিকের আত্মীয় থেকে নয়। বিষয়টি সঠিক নয়। বাবার দিকের আত্মীয় থেকেও এ রোগ পেতে পারি।

ছেলেদের স্তন ক্যানসার হয় না। এটিও ভুল ধারণা। শতকরা একভাগ ক্ষেত্রে ছেলেদেরও স্তন ক্যানসার হতে পারে। যদি কোনো পরিবারে ছেলে সদস্যের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে, তবে সেই পরিবারের মেয়েরাও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ ধারণা করা হয়, ছেলের স্তন ক্যানসারে জিনগত ক্রটি থাকে, যা জিনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের বাকিদের কাছে যেতে পারে।

শুধু স্তন ক্যানসারের নয়, পারিবারিকভাবে ওভারি বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দুটি অঙ্গের ক্যানসার আক্রান্ত একই জিনের কারণে হয়। এগুলোর নাম ইজঈঅ১ ও ইজঈঅ ২ জিন। এ ছাড়া যদি পরিবারের কোনো সদস্য কম বয়সে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যদি কোনও সদস্যের দুই স্তনে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, কোনও নারী এক স্তনের ক্যানসার আক্রান্ত হলে তার অন্য স্তনও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই পারিবারিক ইতিহাস জানুন এবং গুরুত্ব দিন।

আমাদের দেশে সাধারণত মাসিক বন্ধ হওয়ার আগেই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস বেশি (যদিও অন্যান্য দেশে আক্রান্তের হার মাসিক বন্ধ হওয়ার পর বেশি দেখা দেয়)। তাই এ সময় স্ক্রিনিংয়ের জন্য যে ম্যামোগ্রাম করা প্রয়োজন, সেটি করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা। ডাক্তারকে মাসিকের সময় বলে নির্ধারণ করে নিন, আপনার জন্য কখন এ পরীক্ষা নিরাপদ।

জেনে রাখা প্রয়োজন, গর্ভবতীও ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই গর্ভবতীর এ সময় অবশ্যই সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে গর্ভবতী অবস্থায় যেহেতু স্তনের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটে, তাই এ সময় ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সামান্য পরিবর্তন হলেই সঙ্গে সঙ্গে আলট্রাসাউন্ড করা যেতে পারে। সন্দেহজনক মনে হলে, চিকিৎসকের পরামর্শমতো থ্রিডি ম্যামোগ্রাম করা যেতে পারে। শিল্ডিং করার মাধ্যমেও অনাগত সন্তান নিরাপদে রাখা যায়। তাই পারিবারিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি নিজেকে জানুন এবং সচেতন হোন। স্তন ক্যানসার থেকে দূরে থাকুন।

লেখক : স্তন ও পায়ুপথের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ

1 thought on “স্তন ক্যানসার সচেতনতার বিভিন্ন দিক”

Leave a Comment